স্বদেশ ডেস্ক: বানারীপাড়ায় আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের এক দিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব ও পুলিশ। ঘাতক রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদার হত্যার ঘটনা খুলে বলার পাশাপাশি আদালতেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের প্রবাসী আ. রবের বাড়ির দুই নির্মাণশ্রমিক জাকির হোসেন ও জুয়েল হাওলাদার শুক্রবার রাতে প্রবাসীর বৃদ্ধা মা, ভগ্নিপতি ও খালাতো ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে নিজেদের আড়াল করতে চেয়েছিল। কিন্তু র্যাব-পুলিশের কৌশলী পদক্ষেপে আটক জাকিরের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে হত্যার কারণ এবং তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদারের নাম।
ঘাতক জুয়েল হাওলাদারকেও শনিবার রাতে বরিশাল শহরের কাউনিয়া থেকে আটক ও লুটে নেয়া স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। র্যাবের মিডিয়া শাখা এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঘাতকদ্বয় জ্বিন নিয়ে আসার নামে শুক্রবার রাতে অভিনব কায়দায় ওই বাড়ির দরজা খোলা রেখে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।
প্রবাসীর বাড়িতে আরো সদস্যের বসবাস থাকলেও ওই রাতে বৃদ্ধ মা মরিয়ম বেগম (৭৫), বেড়াতে আসা ভগ্নিপতি শফিকুল আলম (৬৫) এবং খালাতো ভাই ইউসুফকে (২২) শ্বাসরোধ করে হত্যার সময়ক্ষণ কেউ আঁচ করতে পারেনি। সকালে বৃদ্ধার কলেজপড়ুয়া নাতনী আছিয়া আক্তার জেগে উঠে দাদির লাশ পড়ে থাকতে দেখে। পরে ঘরের অন্য কক্ষে ভগ্নিপতি শফিকুল আলম এবং বাড়ির পুকুরে খালাতো ভাই ভ্যানচালক ইউসুফের হাত-পা বাঁধা লাশ পর্যায়ক্রমে পাওয়া যায়।
ঘাতক শনাক্ত করতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, পিবিআই ও সিআইডি কাজ শুরু করে। অবশ্য ঘটনা জানাজানির পরপরই শনিবার সকালে স্থানীয় থানা পুলিশ বাড়িতে অবস্থানরত নির্মাণশ্রমিক জাকির হোসেনকে আটক করে। প্রশাসনের জিজ্ঞাসাবাদে জাকির হোসেন হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে জুয়েল নামে অপর একজন সহযোগীর নাম প্রকাশ করে।
পরে শনিবার বেলা ১২টার মধ্যে র্যাবের একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জুয়েলের অবস্থান শনাক্ত করে শনিবার রাতে বরিশাল শহরের পশ্চিম মতাশার মুহুরিকান্দা এলাকা থেকে জুয়েলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরে জাকিরের বরিশাল নগরীর সাগরদীর ভাড়া বাসা থেকে ওই রাতে লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার ও তিনটি মোবাইল সেটসহ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার জুয়েল ও জাকিরকে মুখোমুখি করা হলে উভয়ে অভিন্ন তথ্য দিয়ে জানায় লোভে পড়ে তিনজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পূর্বে তারা ওই জিন নিয়ে আসার নাটক সাজিয়ে ছিল। জাকির দীর্ঘ দিন ধরে প্রবাসী আব্দুর রবের বাড়িতে নতুন ভবন নির্মাণে শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি জিনের ওঁঝা বা বাদশা পরিচয় দিয়ে নিজের দক্ষতা প্রকাশ করে পরিবারের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে ওঠে।
যাতায়াতের সূত্র ধরে প্রবাসীর বাড়িতে বেশি মাত্রার স্বর্ণালঙ্কার থাকার ধারণায় সদ্য কাজে যোগদান করা অপর সহযোগী নির্মাণশ্রমিক জুয়েলের সাথে চুরির পরিকল্পনা করে। কিন্তু ঘটনার রাতে জিন নিয়ে আসার নামে বাড়ির দরজা খোলা রাখার পরামর্শ দেয়া হলেও পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি থেকে বেড়াতে আসা প্রবাসীর ভগ্নিপতি শফিকুল আলম ও খালাতো ভাই ইউসুফের উপস্থিতি অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে উভয় ঘাতক মিলে একে একে তিনজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
তবে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যুবক ইউসুফ প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার পর বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুরে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয়া হয়। এই ঘটনা মরিয়ম ও শফিকুল আলম আঁচ করতে পারায় তাদেরকেও একইভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরে ভোরে গ্রামবাসীর অলক্ষে জুয়েল লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে বরিশাল শহরে চলে যায়।
এ দিকে জাকির নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে রাতে ওই এলাকায়ই থেকে যায়। এ দিকে ঘটনার একদিন পর রোববার সকালে প্রবাসী হাফেজ আ. রবের ছোট ভাই ঢাকায় এনআরবি ব্যাংকে কর্মরত সুলতান মাহামুদ বাদি হয়ে বানারীপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অপর দিকে ট্রিপল এ হত্যাকাণ্ড শুধু কি স্বর্ণালঙ্কার ও টাকাপয়সা লুটের কারণে নাকি পরকীয়া প্রেমের কোনো ঘটনা রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে কাজ করছে পুলিশ। রোববার সকালে ঘটনার সময় অক্ষত থাকা প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশু ও ভাতিজি কলেজছাত্রী আছিয়া আক্তার আফিয়াকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
বিকালে হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই তিনজনের জানাজা ও দাফনের সময় মিশু ও আছিয়াকে পুলিশ প্রহরায় বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদেরকে আবারো থানায় নিয়ে আসা হয়।